মাছ বাজার বলতেই আমরা বুঝি এমন কোন স্থান যেখানে খুব হট্টোগল হচ্ছে। মনে পড়ে, ছোটবেলায় শিক্ষকের সেই বিখ্যাত বকা ‘ক্লাসটা কে কি মাছ বাজার পেয়েছো!’। আমরা মাছে ভাতে বাঙালি। মাছ আমাদের খাবার তালিকায় অতি প্রচলিত এবং গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই মাছ বাজারের সাথেও আমাদের সম্পর্কটা অনেক পুরনো। অনেকেরই অনেক রকম স্মৃতি তো আছেই!
আচ্ছা মাছ বাজার মানেই যদি হট্টগোল হয়। তবে কখনো কি আমরা ভেবে দেখেছি, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় হট্টগোলের জায়গাটা কোথায় হতে পারে? হ্যা, পৃথিবীর সবচেয়ে বড় মাছ বাজারের কথায় বলছি! সুকিজি। জাপানের টোকিওতে অবস্থিত সুকিজি মাছের বাজারই হল পৃথিবীর সবচেয় বড় মাছের বাজার।
১৯৩৫ সালে যাত্রা শুরু করে এই মাছ বাজার। ১৯২৩ সালের এক ভূমিকম্পে ধ্বংস হওয়া এক বাজারের পুনঃপ্রতিষ্ঠা হিসেবেই সুমিদা নদীর তীরবর্তী গিনজা জেলায় প্রতিষ্ঠিত হয় সুকিজি মাছ বাজার। দুই লাখ ৩০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত এই মাছ বাজার মূলত সামুদ্রিক মাছের জন্যই বিখ্যাত। এই বাজারের টুনা মাছ বিশ্বসেরা। এমনকি পৃথিবীর সবচেয়ে দামি টুনা মাছ বিক্রির রেকর্ডগুলো এই বাজারের বিক্রেতাদের দখলে।
বাজারটি যেমন ঐতিহ্যবাহী তেমনি জাপানি পর্যটকদের কাছেও প্রিয় একটি স্থান। শুধু জাপান থেকেই না প্রতি বছর হাজারও বিদেশি পর্যটক ভীড় জমায় সুকিজিতে। প্রতিদিন প্রায় ৪০-৪৫ হাজার মানুষের ভিড়ে জমজমাট থাকতো এ বাজার। বাজারে মূলত দুইটি স্তর ছিলো। একটি বাজারের বাহিরের স্তর এবং একটি ভেতরের। বাহিরের স্তর মূলত দর্শনার্থীদের জন্য উম্মুক্ত। সেখানে আছে নানা রকমের রেঁস্তোরাসহ নানা রকমের দোকান। সুকিজির মূল বাজারটাই ভেতরের স্তর। সেটি মূলত পাইকারি বিক্রি-বাট্টার স্থান। ভোর ৫টার মধ্যেই বাজারের কাজকর্ম শুরু হয়। ক্রেতা বিক্রেতা ছাড়া দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত নয় বাজারের ভেতরের এই স্তর। তবে বিশেষ অনুমতিক্রমে সকাল ৯টার পর দর্শনার্থীদের ভেতরে যাবার সুযোগ দেয়া হয়। সুকিজির বাহিরের অংশের দিকটা ছিলো সম্পুর্ণভাবেই দর্শনার্থীদের জন্য। সেখানে রয়েছে হরেকরকম সামুদ্রিক মাছের রেঁস্তোরা। মূলত পর্যকটকদের জন্য সাজানো হতো সুকিজির বাইরের অংশ।
তবে এত বিশাল কর্মযজ্ঞ বন্ধ হয়ে গেলো এই অক্টোবরের ৬ তারিখ। প্রায় ৭০ হাজার কর্মীর প্রাণোচ্ছ্বল সুকিজি বাজারে শেষ কেনাবেচা হয়েছিল ওই দিনে। ১৬২ কেজি টুনা মাছ ৩৭ হাজার ৮০০ ডলারে বিক্রির মধ্য দিয়ে শেষ হয় টুনা মাছ বিক্রির একটি ইতিহাস। সুকিজির এই মাছের বাজের ‘ব্লু ফিন টুনা’ সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হলেও প্রায় ৪০০ রকমের সামুদ্রিক মাছ পাওয়া যেত এখানে। পুরো বিশ্বের সামুদ্রিক মাছের প্রেমিকদের কাছে সুকিজি ছিলো এক আশ্চর্যের নাম। এই বাজারের মূল বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যে একটি ছিল এখানকার নির্ভেজাল পণ্য।
সুকিজির বন্ধ হয়ে যাওয়ার মূল কারণ, অলিম্পিক। ২০২০ সালের অলিম্পিক আসরে স্বাগতিক দেশ জাপান। আর এই সুকিজিতেই হবে অলিম্পিকের জন্য সাময়িক পার্কিং এর স্থান। অলিম্পিক এর পরে সেখানে মনোরম পর্যটক কেন্দ্র করার পরিকল্পনা আছে জাপান সরকারের। তাহলে প্রশ্ন আসতেই পারে সুকিজির বাজারটা কি আর থাকছেই না? জাপানের বাজারের মাছ আমাদের খাদ্য তালিকায় না থাকলেও মাছ-ভাতের বাঙালির জন্য এই বাজারের তিরোধান সত্যিই বেদনাল।
সুকিজি বাজারকে স্থানান্তর করা হচ্ছে তয়োসুত নামক একটি কৃত্রিম দ্বীপে। হয়তো, এই বাজারেও আসবে সমুদ্রের টুনা, অক্টোপাস, কোরালেরা। হয়তো এখানেও ডাক পড়বে নিলামের। দাম হাকাবে ক্রেতা। কিন্তু থাকবে না সেই আবেগ! যা সুকিজির হট্টগোলের মধ্যে ছিল!
সম্মৃদ্ধ জাতি গঠনের জন্য চাই উন্নত চিন্তা। গনতান্ত্রিক দেশ ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনে শুধু তথ্যযুদ্ধ এবং ইস্যু দিয়ে ইস্যু চাপা দেয়া নয়, দরকার মননশীল সাংবাদিকতা। একতরফা ভাবনা বা মতের প্রতিফলনের বাইরে সত্য ও প্রজ্ঞার সন্নিবেশ ঘটাতে বিশ্লেষণী সাংবাদিকতার কোন বিকল্প নেই। কিন্তু এই উদ্যোগ আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া সম্ভব নয়। ডোনেট করুন এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জাতিগঠনের গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অংশীদার হোন।
মোবাইল ব্যাংকিংঃ Bkash & Nagad (personal): 01677014094
https://paypal.me/jobanmedia