একটি মাঠ চাই। সবুজ ঘাসে ছাওয়া একটি মাঠ। এক মুঠো খোলা আকাশ চাই। চাই মেঘ-রােদ্দুরের খেলা। না, আমি ভরাযৌবনের ঘ্রাণটুকু মুছে আচমকা কৈশােরে ফিরতে চাইছি না। আমি একটি মাঠ চাই সুন্দর আগামীর জন্য, কালকের কিশোরের জন্য। প্রহসন ঠেকছে কথাগুলো? ক্রমান্বয়ে পরিষ্কার করবো কথিত শহুরে সভ্যতার যুগে আচমকাই জানানো মাঠের আকুতির হেতু।
চাই খোলাপ্রান্তরে ছুটে চলার অবাধ স্বাধীনতা। দাড়িয়াবান্ধা, হা-ডু-ডুতে মজে পার করা বিকাল। খেলা শেষে দলবেঁধে নদীতে ঝাঁপ দেয়ার উচ্ছ্বাস। চাই রক্তরাঙা পলাশ-এর নিচে বসে উদ্দাম তর্ক। সব কেমন যেন হারিয়ে গেল কালের আবর্তে। প্রিয় বন্ধুকে ‘তুমি’ বলে সম্মোধন তো ছিল রীতিমতাে পাপের মতো। ওই তুই বদলে এখন শুধু তুমিই হয়নি, যে হালত দেখা যাচ্ছে এতে দু’দিন পর বন্ধুত্বই থাকে কি না সেটি নিয়েই তাে গবেষণার প্রয়োজন!
আগেই পরিষ্কার করে বলে নিই, আমি কোনো তাত্ত্বিক নই, নই বহু ডিগ্রিতে ন্যুব্জ কোনো বিশেষজ্ঞ। আমি খুব সাধারণ আদমি যে ফুটপাথে বসে অলস চোখে চেয়ে দেখে শহুরে মানুষের ব্যস্ততা। কোনো এক টঙ দোকানে চায়ের আড্ডায় সাধারণ মানুষের ভিড়ে হারিয়ে যাওয়া একজন। তাই আমার যা কিছু জ্ঞান তা পুস্তকলব্ধ নয়, বরং নিজের অভিজ্ঞতা থেকে সঞ্চিত।
কয়েক বছর ধরে গ্রাম্য ‘দাড়িয়াবান্ধা’, ‘ডাংগুলি’, ‘হা-ডু-ডু’র বদলে আরেকটি নতুন খেলা সৃষ্টি হতে দেখেছি- ‘পাওয়ার গেইম’। আগে খেলার সময় খেলার ছলে তুমি সম্মোধনটা বদলে অনেক সময় আপনিতে পরিণত হতাে। আর নব্য সৃষ্ট পাওয়ার-এর ওই খেলায় তুমি বদলে হয়ে যাচ্ছে তুই। বন্ধুত্বের অধিকারের সম্মোধন নয় এটা, বরং পাওয়ার গেইমের প্রভাবশালী আদমি প্রতিপক্ষকে হেয় করতে ব্যবহার করছে ওই সম্মোধন। আগে সব বন্ধু মিলে চাঁদা তুলে একাট্টা হয়ে চড়ুইভাতি খেলার ছলে একত্র হতো ভূরিভোজনের জন্য। এখনো দাওয়াত মিলছে। তবে ধরন বদলে গিয়েছে। চড়ুইভাতির বদলে দাওয়াত মিলছে কুলখানির! বিস্ময়কর বটে। আর এ খেলাটায় যারা মত্ত তারা ঠিকমতো কৈশোরও পেরোয়নি। কী অবলীলায় পাওয়ার গেইম নামক ওই ভয়ঙ্কর খেলায় নিজেরই সহপাঠী বা পরিচিত কোনো ছোট-বড় ভাইকে জখম/হত্যা করছে অবলীলায়! অথচ এ বয়সের ছেলে-ছোকরাদের হাতে থাকার কথা প্রিয় লেখকের বই, রঙ-তুলি কিংবা কলম।
ওই পাওয়ার গেইম নামক অসুস্থ খেলার কথা প্রথম প্রকাশ্যে আসে উত্তরায় ২০১৭ সালের ৬ জানুয়ারি দু’গ্রুপের মধ্যকার সংঘর্ষে কিশোর আদনানের খুন হওয়র মধ্য দিয়ে। বিষয়টি যে নিছকই বিচ্ছিন্ন একটি ঘটনা নয় তা প্রকাশ পায় খুনের সন্দেহে গ্রেফতারকৃত আসামিদের বয়ানে। মূলত গ্যাং সংস্কৃতির উত্থান যা সম্পর্কে অনেকটাই আঁধারে ছিল আমজনতা। তাদেরই চোখ খুলে দেয় আদনানের ওই হত্যকাণ্ডটি। এটি নিছকই কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছিল নয়, বরং গ্যাং বা পাওয়ার গেইম নামক ওই অদ্ভুত খেলার বলি ওই কিশোর। সমবেদনা জানানোর আগে একটু জানাই, সে হত্যার শিকার না হলে অন্য কেউ তার হাতে খুন হতো না- এমনটা বলারও কোনো উপায় নেই। কেননা সেও ওই মরণ খেলার খেলোয়াড় ছিল। ওই পাওয়ার গেইম নামক খেলার খেলোয়াড়রা আবার একা খেলে না। তাদের দলও আছে। যেমন অদ্ভুত ওই খেলা তেমন অদ্ভুত দলগুলোর নাম। ফিরিঙ্গি শব্দগুলো ধার করে এর সঙ্গে সদস্য সংখ্যা জুড়ে দিয়ে সৃষ্টি হচ্ছে এসব নাম।
জানা গেছে, উত্তরায় ওই গ্যাং কালচার তথা পাওয়ার গেইম নামক মরণ খেলার সূচনা খুব বেশি দিনের নয়। এর জন্ম ২০০১ সালের দিকে। এত বছর ধরে একটি অসুস্থ খেলা গোটা এলাকায় হচ্ছে। অথচ কেউ এতটুকু রাঁ করলো না- বিষয়টি বিস্ময়কর বৈকি! ১৬ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে তাদের বয়স। বই-খাতার সঙ্গেই যেখানে সম্পর্ক শেষ হওয়ার কথা নয় সেখানে তারা জড়িয়ে পড়ছে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, ছাত্রী উত্ত্যক্ত করায, মাদকসেবন, ছিনতাইয়ের মতো কর্মকাণ্ডে।
উত্তরার ঘটনাটা অনেকেই ভুলে গিয়েছিলেন। কিন্তু পাওয়ার গেইমের নেশায় মত্ত খেলোয়াড়রা তো আর চুপ করে বসেছিল না। ফেইসবুকেই হুমকি-ধমকি চললেও স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফের বিগড়ে দেয় চট্টলার সন্তানরা। একই বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি আরো একটি ঘটনার জন্ম দিয়ে চট্টলার সন্তানরা জানান দেয়, উত্তরার হাওয়া তাদের গায়েও বেশ লেগেছে। উত্তরার সূর্য সন্তানরা যখন সহপাঠীকেই পরপারে পাঠিয়ে দিয়েছে সেখালে চট্টলার বীররা গুলি করে বসেছে স্বয়ং পুলিশকেই। তাদের আবার বড় ভাইও আছে। তারাই অস্ত্রের জোগানদাতা ও পাওয়ার গেইম নামক ওই অসুস্থ খেলার নেপথ্য পরিচালক। তা খেলা যখন হয় দুই গ্রুপের মধ্যে তখন পুলিশ কেন গুলি খেল- সেটিও একটা প্রশ্ন বটে। মূল ঘটনা হলো, অস্ত্রধারী যুবক মোটরবাইকযোগে ছুটে চলেছিল প্রতিপক্ষের এক আদমিকে শায়েস্তা তথা কতলের অভিপ্রায়ে। কথা ছিল কতল শেষেই কালো বন্দুকটি জমা হবে খেলার গুরু ওই নেতার কাছে। কিন্তু পথিমধ্যেই পুলিশের তল্লাশি চৌকি পড়ায় ঘাবড়ে গিয়ে মূল লক্ষ্যের বদলে পুলিশের গায়েই গুলি করে নিশানা কতটা নিখুঁত তা যাচাইয়ের অযাচিত চেষ্টা চালিয়েছে আসামি। ওই গ্রুপের কর্মকাণ্ডও মুগ্ধকর। খুন, ধর্ষণ, ইভটিজিং, মাদকসেবন- মোদ্দা কথা, কালো জগতের সব শাখাতেই তাদের অবাধ বিচরণ। চট্টলায় শুধু ওই একটি গ্রুপই রাজত্ব করে ভেবে ভুল করিয়েন না, বরং বিভিন্ন মোড়ে বিচিত্র সব নামে চলছে তাদের ওই কথিত পাওয়ার গেইম।
পরিস্থিতির যে সামান্যতম উন্নতিও হয় নি তার আমরা গেলো দু বছরেও অসহায় ভাবে প্রত্যক্ষ করেছি। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসে এই গ্যাংএর গুতোগুতিতে প্রাণ যায় ১৪ বছরের এক কিশোরের। ২০২০ সালের আগস্ট মাসের ঘটনা আরো ভয়াবহ। রিক্সার চাকা থেকে পানির ছিটা গায়ে লাগানোর মত ‘গর্হিত অপরাধ’র জন্ম দেয়ার দায়ে দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করতে হয় সোহাগ নামের এক কিশোরকে! ২০২০ সালে পাওয়া তথ্য মতে শুধু রাজধানীতেই সক্রিয় গ্যাংয়ের সংখ্যা অর্ধশতাধিক! নিজেদের গ্যাংস্টার ভেবে সুকুন পাওয়া এই কিশোরদের কর্মকাণ্ড যদি আপনাকে হতাশ করে তবে আপনার বিস্মিত হবার শক্তির সর্বোচ্চ পরীক্ষা নিবে গ্যাংগুলোর নাম! লাড়া দে, কোপাইয়া দে, দেখে ল চিনে ল, লেভেল হাই নামক নাম শোনার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া জানানোও বেশ কষ্টসাধ্য।
কাফরুল | নয়ন গ্যাং | শাহ আলী | স্টার বন্ড গ্রুপও মোল্লা রাব্বি গ্রুপ |
পল্লবী | বিহারি রাসেল গ্যাং , পিচ্চি বাবু ও সাইফুলের গ্যাং, রিপন গ্যাং, বিচ্চু বাহিনী, মোবারক গ্যাং | উত্তরা | নাইন স্টার গ্রুপ, পোটলা বাবু গ্রুপ, জি ইউনিট, চাপাতি সুমন গ্রুপ |
ধানমণ্ডি | নাইন এম এম, একে ৪৭ ও ফাইভ স্টার গ্রুপ | তেজগাঁও | মাঈনুদ্দিন গ্রুপ |
মোহাম্মদপুর | গ্রুপ টোয়েন্টিফাইভ, লাড়া দে, লেভেল হাই, দেখে ল-চিনে ল, কোপায়ইয়া দে গ্রুপ | উত্তরখান | নাজিম উদ্দিন গ্যাং, সোলেমান গ্যাং শান্ত গ্যাং, মেহেদী গ্যাং |
বংশাল | জুম্মন গ্যাং | তুরাগ | তালা-চাবি গ্যাং |
চকবাজার | টিকটক গ্যাং, পোঁটলা সিফাত গ্যাং | মুগধা | চান-জাদু, ডেভিল কিং ফুল পার্টি, ভলিয়ম টু ও ভাণ্ডারি গ্যাং |
এবার আসেন শুরুতে এক টুকরো সবুজ জমিনের আকুতি কেন করলাম ওই বিষয়ে। পাওয়ার গেইম বা গ্যাং প্রথা থেকে পরিত্রাণের উপায় সম্পর্কে তাত্ত্বিকরা বহুবিধ বিশ্লেষণ করেছেন। অনেকে বলেছেন, পারিবারিক সৌহার্দ্য বাড়াতে, কেউ বলছেন সন্তান কার সঙ্গে মিশছে ওই বিষয় কড়া নজর রাখতে- বহু কিছু। এখানে মজার যে বিষয় তা হলো, ওই তাত্ত্বিকদের অধিকাংশেরই বেড়ে ওঠা একান্নবর্তী পরিবারে। তাদের কথা বাদ দিন। নব্বইয়ের শুরুতেও যাদের জন্ম তাদের হালতও একই। কতজন হলফ করে বলতে পারবেন যে, তার অভিবাবকরা এসব নিয়ে মাথা ঘামিয়েছেন? যাদের সন্তান দু’চারের ঘরে ছিল তারা যাও কিছুটা খবর রাখতো, ঝোঁকের বশে যারা সন্তান জন্মদানে ডজনের কাছাকাছি পৌছে যেতেন তাদের সন্তানদের চেনার জন্য অনেক সময় পৈতৃক পদবি ইয়াদ করিয়ে দেয়ারই জরুরত দেখা দিত। তবু তখন ওই গ্যাং বা পাওয়ার গেইম নামক অসুস্থতার প্রচলন ছিল না।
দলবেঁধে স্কুলে যাওয়া, আসরের আজানটি মুয়াজ্জিনের কণ্ঠ থেকে বের হয়েছে, কী হয়নি, উদ্দাম কিশোরের দলের গন্তব্য হতো মাঠ। এক টুকরো সবুজ জমিন। মাঠ থেকে কি শুধু খেলার আনন্দটুকুই পাওয়া যায়? আমার তা মনে হয় না। আজ আমরা যে ‘আমি’তে আটকে গিয়েছি, মাঠের যখন প্রাচুর্য ছিল তখন ওই ‘আমি’টাই ছিল ‘আমরা’। দলবেঁধে খেলা একাত্মতা শিক্ষা দেয়, দলগত খেলায় থাকেন এক নেতা। তার নেতৃত্ব অনুসরণের মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে নির্দেশনা মানার অভ্যাস। আর যিনি নেতৃত্ব দেন তার মধ্যে গড়ে ওঠে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার, নেতৃত্ব দানের ক্ষমতা। খেলার আনন্দে উৎফুল্ল মন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখে অপচিন্তা থেকে। তাই ওই এক টুকরো জমিন শুধুই জমিন নয়, বরং ভবিষ্যতে ‘মানুষ’ হওয়ার অনেক উপাদানই এখান থেকেই জন্ম নেয় অজান্তে। আর খেলা শেষে ক্লান্ত শরীর চায় বিশ্রাম। তাই রাত জাগার বদভ্যাস যা এখন মহামারী আকার ধারণ করেছে সেটি থেকেও মুক্তি দেয় ওই মাঠই। আরো গভীরে যাই। এই যে মাদক নিয়ে এত সমস্যা এর অস্তিত্বও থাকবে না মাঠ থাকলে। খেলতে দম লাগে। মাদক শুধু মানুষিকই নয়, শারীরিক সক্ষমতাও নিঃশেষ করে দেয়। পলে কথিত নগরায়নের নামে যত্রতত্র দালান-কোঠা না তুলে কিশোরদের দম নেয়ার জন্য এক টুকরো মাঠ দিন। দেখবেন, ওই সবুজের প্রলোভনই ভুলিয়ে দেবে ইয়াবা, সিসাসহ মাদকদ্রব্যগুলোর নাম। আপনি আর সব বাদ দিন, এক মনে কিছুক্ষণ সবুজ গাছের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে দেখুন একবার, আশ্চর্য এক প্রশান্তি পাবেন। আগেও বলেছি, আমি তাত্ত্বিক নই, যা বলছি এর সবটাই নিজের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান থেকে।
যারা অভিবাবকদের কাছে সমস্যার সমাধান খুঁজছেন, আমি বলবো- আপনারা কল্পনায় আছেন। আগে কিশোররা দলবেঁধে বিদ্যালয়ে যেত। এখন যান অভিবাবকরা। গিয়ে তারা কতটা কী করেন জানা নেই। কিন্তু সন্তানকে নজরে রাখার নামে তাদের ওই যে একঘরে করে ফেলার অদ্ভুত প্রচেষ্টা এটার পরিসমাপ্তি ঘটছে পাওয়ার গেইম নামক এই অদ্ভুত অবস্থার মধ্য দিয়ে। মানুষ সামাজিক জীব। আপনি নিয়ন্ত্রণের নামে যদি কারো সঙ্গে আপনার সন্তানকে মিশতে না দেন, তার সোনালি বিকালটা আটকে রাখেন ইট-পাথরের চার দেয়ালে ভিডিও গেইমসের মধ্যে তাহলে সে তো ওইটাকেই জগত ভেবে নেবে। এমনটা বলার কারণ হলো, যারা ওইসব কথিত গ্যাং সংস্কৃতি বা পাওয়ার গেইমের অংশ তারা অধিকাংশকই উচ্চ মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তান। তারা মানুষের সহচার্যের অভাবে ভিডিও গেইমসটিকেই ভাবছে বাস্তব জগৎ। আর যাদের সঙ্গে মেশার সামান্য সুযোগ পাচ্ছে তারাও একই মানসিকতার। তাই, জিটিএ বা গডফাদার টাইপ গেইমস দ্বারা প্রভাবান্নিত হয়ে বাস্তবেই এর প্রতিফল ঘটাতে গিয়ে প্রাণ কেড়ে নেয়ার মতাে পৈশাচিক ঘটনার জন্ম দিচ্ছে অনায়াসে।
যে কোনো অপমৃত্যুই কষ্টদায়ক। আর সেটি আরো কষ্টদায়ক হয়ে ওঠে যখন নিতান্তই কিশোর বয়সের কেউ জড়িত থাকে ওইসব অপমৃত্যুর পেছনে। আপনি বহু তত্ত্ব হাজির করতে পারেন। কিন্তু একটু টুকরো মাঠের যে ক্ষমতা সেটি পূরণ করতে পারবেন না। উচ্ছল কৈশোর যদি খোলা মাঠে বিচরণের অবাধ স্বাধীনতাই না পায় তাহলে সে জীবনের যে মানে বুঝবে সেটি তাকে আর যাই করুক ‘মানুষ’-এ পরিণত করতে পারবে না। এ জন্য ওই অপরিকল্পিত নগরায়ন বন্ধ করে একট টুকরো মাঠ দেয়া হোক কিশোরদের, দেয়া হোক খোলা আসমান দেখার সুযোগ। মানুষে মানুষে রাবতার যে তাসকিন তা আর যাই হোক, ভিডিও গেইমসে পাওয়া যায় না। ওইসব গেমস বরং প্রলুব্ধ করে ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা পিশাচটাকে বের হয়ে আসার সুযোগ করে দিতে। আর ওই নির্মম পৈশাচিকতায় হারিয়ে যায় প্রিয় মাঠের খেলা, অঙ্কুরেই ঝরে যায় খোদার ইনায়াত প্রিয় প্রাণ।
এক সময় ‘নীল ছবি’ দেখা নামক এক অদ্ভুত রোগ বাসা বেঁধেছিল যুব সমাজে। সেটি থেকে যখন প্রায় মুক্ত সমাজ তখন জন্ম নিল আরেক নীল জগৎ ‘ফেইসবুক’। যুব সমাজের অধিকাংশ সময়টা কেটে যায় জাকারবার্গ-এর পকেট ভারী করে। অন্যদিকে নিজের অজান্তেই হারিয়ে যাচ্ছে জীবনের মূল্যবান সময়টুকু। মানুষের সঙ্গে মানুষের সহজাত মিশতে পারার যে ক্ষমতা তা ফেইসবুক কতটা নষ্ট করে দিচ্ছে তা হয়তো অদূর ভবিষ্যতেই টের পাওয়া যাবে। এখান থেকেও সৃষ্টি হচ্ছে দ্বন্দ্ব। প্রত্যেক গ্রুপেরই আবার আছে নিজস্ব পেইজ। সেখান থেকে দেয়া হচ্ছে প্রতিপক্ষকে হুমকি-ধমকি। পুরো পাতাতেই নানান অস্ত্রের বাহার যেন কোনো অস্ত্রের জগতে প্রবেশ করেছেন আপনি। প্রত্যেকেই যে এটি সচেতন মনে করছেন তা বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। বরং আমার মনে হয়, কল্পনার এক রাজ্যে ডুবে গিয়ে তারা স্বাভাবিক চিন্তা করার ক্ষমতাটাই হারিয়ে ফেলেছে। না হলে সামান্য কথা কাটাকাটি বা কাউকে না চেনার ‘অপরাধ’-এ প্রাণ নেয়ার কথা তো স্বাভাবিক কারো মাথায় আসার কথা নয়।
কত প্রজেক্টের কথা শুনি, কত মেগা প্রজেক্ট। অথচ যাদের কথা ভেবে এত আয়োজন তারা যে পাওয়ার গেইমের নেশায় মত্ত! মেগা প্রজেক্টের এক শতাংশ খরচ দিয়েই মেটানো যায় একটা মাঠের চাহিদা। এক টুকরো সবুজ মাঠ, এতে উচ্ছল কিশোর-কিশোরীর দল- এর চেয়ে সুন্দর দৃশ্য আর কী আছে? অথচ এটুকু করার অনীহাতেই ফুল হয়ে ফোটার আগে প্রাণ হারাচ্ছে আদনানের মতো অঙ্কুর। তাই দাবির সঙ্গেই বলতে চাই, অপরিকল্পিত নগরায়ন বা উন্নয়ন নয়, এক টুকরো মাঠ চাই। যে মাঠ পাওয়ার গেইমের নেশায় মত্ত আদনানদের জীবন কেড়ে নেবে না, বরং শেখাবে জীবনের মানে, ‘মানুষ’ শব্দটি র সত্যিকারের অর্থ।
সম্মৃদ্ধ জাতি গঠনের জন্য চাই উন্নত চিন্তা। গনতান্ত্রিক দেশ ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনে শুধু তথ্যযুদ্ধ এবং ইস্যু দিয়ে ইস্যু চাপা দেয়া নয়, দরকার মননশীল সাংবাদিকতা। একতরফা ভাবনা বা মতের প্রতিফলনের বাইরে সত্য ও প্রজ্ঞার সন্নিবেশ ঘটাতে বিশ্লেষণী সাংবাদিকতার কোন বিকল্প নেই। কিন্তু এই উদ্যোগ আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া সম্ভব নয়। ডোনেট করুন এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জাতিগঠনের গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অংশীদার হোন।
মোবাইল ব্যাংকিংঃ Bkash & Nagad (personal): 01677014094
https://paypal.me/jobanmedia