আপনার প্রকাশিত উপন্যাস ‘কিলিং কমান্দেতোরে’ উপন্যাসটিতে দেখা যায়, যিনি বর্ণনাদাতা, বিশ বছর পরে প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরেও তার মৃত বোনের স্মৃতি তাকে তাড়া করে বেড়ায়। কেন আপনার মনে হয় এই মৃত্যুজনিত বিচ্ছেদ তার জন্য এতটা ভীতিকর ছিল?
হারুকি মুরাকামি : তিন ধরনের আবেগপ্রবণ আঘাত দেখা যায়; এক ধরনের আঘাত যা থেকে শীঘ্রই আরোগ্য লাভ করা যায়, আরেক ধরনের যা সেরে উঠতে অনেকটা সময় লাগে, এবং কিছু আঘাত যা আজীবন থেকে যায় -একেবারে মৃত্যু পর্যন্ত। আমার ধারণা এই উপন্যাসের একটি অন্যতম প্রধান ভূমিকা হলো এই যে একটা ক্ষত তা কতখানি গভীর এবং বিস্তৃত জায়গা জুড়ে রয়েছে তা পর্যবেক্ষণ করা। কেননা, এগুলো এক ধরনের ক্ষতচিহ্ন যা ভালো হোক বা মন্দ হোক, একজন ব্যক্তির জীবনকে নির্ধারণ করে, আকৃতি দেয়। আর গল্পগুলো —বাস্তবিক গল্পগুলো সঠিকভাবে ব্যাখ্যা দিতে পারে কোথায় এই ক্ষতের অবস্থান, এটার নির্ধারিত সীমাই বা কতটুকু (প্রায়ই, আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তি এর অস্তিত্ব সম্পর্কে সচেতন না),এবং এই গল্পগুচ্ছ আঘাত উপশমের কাজ করে।
উপন্যাস লিখার ক্ষেত্রে আমার অনুপ্রেরণার মূল উৎস হলো উয়েডা আকিনারি রচিত এডো- সাহিত্য যুগের শেষের সংগ্রহকৃত ‘টেলস অব স্প্রিং রেইন’র গল্পগুচ্ছ। বিশেষ করে একটি গল্প যেখানে মমি তার জীবন পুনরায় ফিরে পায়।
এই গল্পের সবচেয়ে নাটকীয় মুহূর্তের দৃশ্যায়ন ঘটে মাউন্ট ফুজির কাছে একটি বায়ু গুহার ভেতরে। কোন জিনিস আপনাকে ঐ স্থান পছন্দ করতে প্রভাবিত করেছিল?
মুরাকামি: গুহা আমাকে ভীষণভাবে মুগ্ধ করে। পৃথিবী জুড়ে ভ্রমণের সময় আমি অসংখ্য বার গুহা ভ্রমণ করেছি। মাউন্ট ফুজির এই বায়ু গুহা এগুলোর মধ্যে অন্যতম ।
কথক বা বর্ণনাদাতার বোন, কমি তাকে বলে যে ‘এলিস এডভেঞ্চারস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’র চরিত্রগুলোর বাস্তবে এই পৃথিবীতে অস্তিত্ব আছে। এই গল্পের একটি বিষয় —এবং যা পুরো উপন্যাস জুড়েই আছে তা হলো বাস্তব এবং অবাস্তবতা —এই দুয়ের মাঝে একধরনের অস্পষ্টতা। প্রকৃতপক্ষে আপনি বলতে পারেন এই থিম আপনার প্রচুর সাহিত্যকর্মে ব্যবহৃত হয়েছে। আসলে কি আপনাকে একই ধারণা নিয়ে বার বার লিখতে উৎসাহিত করে?
মুরাকামি : আমি নিজেকেও এই একই প্রশ্ন করি। যখন আমি উপন্যাস লিখি, বাস্তবতা এবং অবাস্তবতা স্বাভাবিকভাবেই মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। বিষয়টা এমন না যে আগেই আমার পরিকল্পনা ছিল এবং লেখার সময় আমি এটাই অনুসরণ করি। তবে আমি যতই বাস্তবতা নিয়ে বাস্তবিক উপায়ে লিখতে চেষ্টা করি, ততই অবাস্তব দুনিয়া অপরিবর্তনীয় ভাবে আমার লেখায় উদিত হয়।আমার কাছে, একটি উপন্যাস সভা বা দলের মতো। যা ইচ্ছা অংশগ্রহণ করতে পারে, এবং যার ইচ্ছা সে চলেও যেতে পারে। আমি মনে করি উপন্যাসের চালিকা শক্তি হবে স্বাধীন।
যখন কমি চলে যায়—একটি অর্থে —র্যাবিট হোলের ভিতর, সে একটি পরিপূর্ণ গুপ্তকক্ষ আবিষ্কার করে। আপনার কাছে কি এই কক্ষের কোনো প্রতীকী অর্থ আছে? অথবা সে কি প্রকৃতপক্ষেই অন্য জগতে চলে গিয়েছিল?
মুরাকামি : আমার মূল দর্শন হলো যে পৃথিবীতে আমরা বসবাস করি যেখানে সবকিছুর সাথেই আমরা পরিচিত, ঠিক তার পরেই যে আরেকটি পৃথিবীর অবস্থান তার সম্পর্কে আমরা কিছুই জানি না। একটি অপরিচিত পৃথিবী যার অস্তিত্ব একই সাথে বিদ্যমান। তবে বাস্তবতা হলো কখনো কখনো দৈবক্রমে আমরা একে ক্ষণিকের জন্য হলেও অনুধাবন করতে পারি —ঠিক যেমন আলোর ঝলকানি মুহূর্তের মধ্যে চারপাশ আলোকিত করে দেয়।
এই উপন্যাসের বাকি অংশেও কি ‘এলিস এডভেঞ্চারস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড’র উল্লেখ আছে?আপনিও কি কমির মতো লিউস ক্যারোলের প্রতি মোহাবিষ্ট?
মুরাকামি :আমি সন্দিহান যে এমন কোনো শিশু আছে যে কি না লিউস ক্যারোলের দ্বারা মুগ্ধ হয় না। আমি মনে করি, বাচ্চারা তার প্রতি আকৃষ্ট হয় কারণ তিনি যে পৃথিবীর চিত্র বর্ণনা করেন তা সম্পূর্ণ রূপে সমান্তরাল বাস্তবতায় নিজেই ধারণ করে। এটার ব্যাখ্যা দেয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। শিশুরাই কেবল এটার অনুভব করতে পারে।
এই উপন্যাসে অন্যান্য সাহিত্যকর্ম যেমন মোজার্ট এর ‘ডন জিওভানী’ থেকে ফিটজেরাল্ডের ‘দ্য গ্রেট গেটসবি’ থেকে ‘ব্লুবিয়ার্ড’স ক্যাসল’র একটা ছাপ আছে। লিখালিখির সময় কি আপনি অন্যান্য সাহিত্যকর্মের দ্বারা অনুপ্রাণিত হন?
মুরাকামি : উপন্যাস লিখার ক্ষেত্রে আমার অনুপ্রেরণার মূল উৎস হলো উয়েডা আকিনারি রচিত এডো- সাহিত্য যুগের শেষের সংগ্রহকৃত ‘টেলস অব স্প্রিং রেইন’র গল্পগুচ্ছ। বিশেষ করে একটি গল্প যেখানে মমি তার জীবন পুনরায় ফিরে পায়। দীর্ঘ সময় আমি গভীরভাবে চিন্তা করেছি কিভাবে এই গল্পটিকে একটি পূর্ণাঙ্গ দীর্ঘ উপন্যাসে রূপ দেয়া যায়। ‘দ্য গ্রেট গেটসবি’ এর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করা যায় এমন কিছু লিখারও ইচ্ছা ছিল আমার।
‘কিলিং কমান্দেতোরে’ আপনার আগের উপন্যাসগুলো থেকে ব্যতিক্রম হবে না কি সেগুলোরই একটা ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে —কি মনে হয় আপনার?
মুরাকামি : এই দীর্ঘ সময়ে ‘কিলিং কমেন্ডেটর’ প্রথম উপন্যাস যেখানে আমি সম্পূর্ণ ‘প্রথম ব্যক্তি’ ব্যবহার করে লিখেছি। প্রকৃতপক্ষে আমি অনেকদিন ধরেই এভাবে না লিখার একটা কষ্ট অনুভব করেছিলাম। এটা এমন একটা অনুভূতি ছিল মনে হয়েছিল আমি নিজেই যেন মূল অংশে ভূমিকা পালন করছি। এই বইটি লিখতে আমি অনেক সময় নিয়েছিলাম। অনেক শ্রমসাধ্য একটি প্রক্রিয়া ছিল তবে আমি পুরোটা সময় জুড়ে উপভোগ করেছিলাম।
সম্মৃদ্ধ জাতি গঠনের জন্য চাই উন্নত চিন্তা। গনতান্ত্রিক দেশ ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনে শুধু তথ্যযুদ্ধ এবং ইস্যু দিয়ে ইস্যু চাপা দেয়া নয়, দরকার মননশীল সাংবাদিকতা। একতরফা ভাবনা বা মতের প্রতিফলনের বাইরে সত্য ও প্রজ্ঞার সন্নিবেশ ঘটাতে বিশ্লেষণী সাংবাদিকতার কোন বিকল্প নেই। কিন্তু এই উদ্যোগ আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া সম্ভব নয়। ডোনেট করুন এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জাতিগঠনের গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অংশীদার হোন।
মোবাইল ব্যাংকিংঃ Bkash & Nagad (personal): 01677014094
https://paypal.me/jobanmedia