Joban Magazineভারতের হস্তক্ষেপ নয়; ভোটের অধিকার চায় জনগন

ওয়েব সংস্করণ/সাম্প্রতিক প্রসঙ্গ

ভারতের হস্তক্ষেপ নয়; ভোটের অধিকার চায় জনগন

মো: নিজাম উদ্দিন

ভারতের হস্তক্ষেপ নয়; ভোটের অধিকার চায় জনগন

যে দেশের গ্রামের একটা ইউনিয়ন পরিষদের মেম্মার নির্বাচনেও চার-পাঁচ জন প্রার্থী হয় সেখানে চৌদ্দ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনশো আসনের একশো চুয়ান্নটি আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বীতায় এমপি নির্বাচিত হয়ে গেলেন! সেই নির্বাচনটি হওয়া এবং সরকারটিকে টিকিয়ে রাখতে যারা শক্তিশালী ভূমিকা রেখেছে নগ্নভাবে সেই দেশটা ভারত! বাংলাদেশের জনগণের সেই নির্বাচনে আর ভোট দেওয়া সম্ভব হয় নাই। জনগণ তার অধিকার থেকে বঞ্চিত হলো।
আঠারো সালের চিত্রটি আরেকটু ভিন্ন। নির্বাচন রাতে হয়ে গেল! দিনের ভোট রাতে হলো। মানুষ ভোট দিতে পারলো না। তবুও রাতের ভোটের নির্বাচনে জয়ী দলকেই ভারত বৈধ সরকারের স্বীকৃতি দিল এবং টিকিয়ে রাখতে ভূমিকা রাখলো।সেবারও জনগণ ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত হলো। চৌদ্দ সালে বিএনপি নির্বাচন বয়কট করে এবং আঠারো সালের নির্বাচনে বিএনপি অংশ গ্রহণ করে কিন্তু ফলাফল একই হয়। মানুষকে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি।নির্বাচনে গেলে কী হয়,না গেলে কী হয় বিএনপির এবং দেশবাসীর সব অভিজ্ঞতাই হলো। আর এভাবেই বাংলাদেশে একটা ব্রুটাল ফ্যাসিস্ট গভমেন্ট প্রতিষ্ঠা পেল ভারতের সরাসরি পলিটিকাল স্পন্সরে।এবারের লড়াইটাও ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার। তবে আগের চেয়ে অনেক বেশি রাজনৈতিক ও সামাজিক শক্তিগুলো এতে জড়িয়ে গেছে। জন-আকাংঙ্খার কেন্দ্রবিন্দুতে এখন একটাই দাবী- ভোটাধিকার ফেরত চাই। ফলে এটাকে কোন ভাবেই বিএনপির একক দাবী আকারে দেখবার সুযোগ নাই।
বাংলাদেশের নিকট প্রতিবেশী ভারত। বিশ্বের পঞ্চম দীর্ঘ সীমান্ত দেশটির সাথে বাংলাদেশের। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারতের সৈনিকরাও রক্ত দিয়েছে,জীবন দিয়েছে। সেটা অধিকারে যদি বাংলাদেশের উপর ভারতের হস্তক্ষেপের স্থায়ী কারণ হয়ে দাঁড়ায় তাহলে বলতেই হয় ভারত বাংলাদেশের বিষয়ে সম্পূর্ণ ভুল পথে হাটছে।ভুল রাজনীতি করছে।
বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন দরজায় কড়া নাড়ছে, মাত্র দুই মাসের মতো সময় বাকী কিন্তু আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে মানুষের জল্পনা কল্পনার শেষ হচ্ছে না।নির্বাচনের যে আমেজ সেই পরিবেশও রাজনৈতিক দল ও জনগণের মধ্যে অনুপস্থিত। সরকারী ইচ্ছা অনুযায়ী অফসিলও ঘোষণা হয়ে গেল। আর সাথে সাথে অস্ত্র হাতে পুলিশ ও লীগের লোকজনকে মিসিল করতে দেখা গেল দেশে জুড়ে। ফলে নির্বাচন কেমন হতে যাচ্ছে তার মহড়া কিন্তু চলতে দেখা যাচ্ছে মহল্লায় মহল্লায় দলীয় ক্যাডারদের ভয়ের রাজত্ব কায়েমের বিরামহীন প্রচেষ্টা দেখেই।
পাকিস্তানের জুলুমের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে ভারতের খপ্পরে পড়াকে আমাদের স্বাধীনতা ‘ছিনতাই’ হয়ে গেছেই বলতে হয়।বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। আবারও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা রক্ষার নামে জনবিচ্ছিন্ন একটি সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে বদ্ধপরিকর ভারত! বন্ধুত্বের নমুনা এমন হলে সেই সম্পর্ক অশান্তির কারণ হবেই। ভারতে বাংলাদেশের চেয়েও বেশি মুসলমানের বসবাস সুতরাং ভারত বাংলাদেশের সংকটের মূল কারণ ধর্মীয় নয়, ইসলামও নয়, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক।
দুই.
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে এক সশস্ত্র লড়াইয়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। অনেক জীবন, সম্ভ্রম,রক্ত,অশ্রু, শরনার্থী, শহিদ, গাজী এবং দুঃখ কষ্টের অবর্ণীয় গল্পের সমাহার এই বাংলাদেশ। পাকিস্তানের জুলুমের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে ভারতের খপ্পরে পড়াকে আমাদের স্বাধীনতা ‘ছিনতাই’ হয়ে গেছেই বলতে হয়।বাংলাদেশের দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আসন্ন। আবারও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার ধারাবাহিকতা রক্ষার নামে জনবিচ্ছিন্ন একটি সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে বদ্ধপরিকর ভারত! বন্ধুত্বের নমুনা এমন হলে সেই সম্পর্ক অশান্তির কারণ হবেই। ভারতে বাংলাদেশের চেয়েও বেশি মুসলমানের বসবাস সুতরাং ভারত বাংলাদেশের সংকটের মূল কারণ ধর্মীয় নয়, ইসলামও নয়, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক।
বাংলাদেশের মূল সংকট জনগণ ভোট দিতে পারে না। ভোট দিতে না পারার সংকট। এখন দেখা যাচ্ছে- মানুষের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠার এই লড়াইয়ে প্রধান বাধাও ভারত।পশ্চিমাদের এদেশে মানুষের ভোটের অধিকারের পক্ষে কথা বলাকে বলা হচ্ছে হস্তক্ষেপ কিন্তু ভারতের নগ্ন হস্তক্ষেপের বিষয়ে কিছু বলা হচ্ছে না! ভারত বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখা বাংলাদেশের যেকোনো মতাদর্শের সরকারের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিবেশি অশান্তিতে থাকলে স্থিতিশীলতা অসম্ভব।বাংলাদেশের জনগণ চায় ভারত বাংলাদেশের বিশেষ দলের সাথে সম্পর্কের পরিবর্তনে বাংলাদেশের জনগণ তথা সকল দলের সাথে (পিপলস টু পিপলস) সম্পর্ক জোরদার করুক। কিন্তু সে পথে ভারত নেই। এতে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা যে খুব সুরক্ষিত হচ্ছে তা বলা যাবে না। কারণ বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মাঝে ভারত সম্পর্কে নেগেটিভ সেন্টিমেন্ট তৈরি হচ্ছে এবং সেটা বাড়ছে।
এর একমাত্র কারণ ভারতের নগ্ন হস্তক্ষেপ। শত বিতর্ক, আপত্তি উপেক্ষা করে আওয়ামী লীগের সাথে সম্পর্ক রাখার নামে ভোট ডাকাতির আয়োজনে এই দলটিকে শক্তি ও সমর্থন জোগানোর প্রচেষ্টা জনগনকে আরও ভারত বিরোধী করে তুলছে।
তিন.
সম্প্রতি ভারতের ‘দি হিন্দু’ পত্রিকায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এক সাক্ষাৎকারে বিএনপিকে ‘সেকুলার পার্টি’ বলে মন্তব্য করলে বিএনপির পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক ভাবে প্রেস নোট দেওয়া হয়। বিএনপি মূলত একটি লিবারেল ডেমোক্রেটিক পলিটিকাল পার্টি। বাংলাদেশী ন্যাশনালিজম যার রাজনীতির মূল স্পিরিট। একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে রাষ্ট্রের ধর্মকে যতটুকু ধারণ ও সম্মান জানাতে হয় বিএনপি তাই করে। বিএনপি ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী। ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার -এই মূলনীতিই দলের শক্তি। সন্ত্রাস ও ধর্মবাদি জেহাদি সংগঠন এবং সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি দলটির। বিএনপি কারো অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপে বিশ্বাসী নয়। বিএনপি কোনো বিশেষ পন্থী নয়,বাংলাদেশ পন্থী। ইকবাল হাসান মাহমুদ চৌধুরীর বক্তব্যের প্রতিবাদ লিপি দলের প্রতি সাধারণ মানুষের বিশ্বাসের প্রতিফলন। ভারত যেন বিএনপির রাজনীতির এই স্পিরিটকে একটা রাজনৈতিক দলের অবস্থান হিসাবে সেভাবেই দেখে-সেটাই আমাদের প্রত্যাশা।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে ভারতের যে অবস্থান তাতে বাংলাদেশের জনগণ খুবই বিরক্ত এবং ক্ষুব্ধ। বাংলাদেশের জনগণের ভোটের অধিকার হরণ করার সহযোগী হয়ে প্রতিবেশীর পাশে থাকার রাজনীতি দিনশেষে ভারতেরও ক্ষতির কারণ হবে। আরেকটি ভোটার বিহীন নির্বাচন বাংলাদেশকে অধিকতর চায়না নির্ভর করে তুলবে। যা ভারত এবং আমেরিকা কারো জন্যই শুভ সংবাদ নয়। আমেরিকার ইন্দো প্যাসিফিক স্ট্রাটেজিকেও বাংলাদেশে ভোটার বিহীন নির্বাচন প্রশ্নের মুখে ফেলে দিতে পারে।
তলে তলে সমঝোতা হয়ে গেছে মানে, ভারত মুখে আমেরিকার নীতির সাথে থাকবে আর তলে তলে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে যাবে- এটা এখন এই তফসিল ঘোষণার পরে পানির মতো পরিষ্কার। কিন্তু কোন সুপার পাওয়ার এই ভাবে ফাংশন করে না। এখানে কেউ আমেরিকান পন্থি রাজনীতির পক্ষে ওকালতির কথা বলছে না। বলছে, আমেরিকার সাথে যে পয়েন্টে জনগনের চাওয়ার ঐক্য তৈরি হয়েছে (গণতান্ত্রিক পথে, জনগনের ভোটে সরকার গঠন) তার বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদি প্রবণতা বাংলাদেশকে পরাশক্তির যুদ্ধভূমিতে পরিণত করবে। আর এর দায় যৌথ ভাবে ভারত ও আওয়ামী লীগের উপরেই বর্তাবে। ফলে ভারতকে এই তলে তলের চালাকি বাদ দিয়ে জনগনের অবস্থানের বা মনোভাবের দিকে ফিরতে হবে। এটা সবার জন্যই মঙ্গলজনক হবে।
বাংলাদেশে মানুষকে ভোট দেওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত রাখার রাজনীতি মানুষকে প্রতিবাদী বিক্ষুবদ্ধ করবেই। দি গার্ডিয়ান বলছে -দশ হাজারের বেশি বিরোধী দলের নেতাকর্মী কারাগারে। পঞ্চাশ লাখ আসামি। এগুলো একটা সুস্থ সমাজ ও রাষ্ট্রের আলামত হতে পারেই না। কারাগার গুলো রাজবন্দীতে ঠাঁসা! এমন একটা ব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার রাজনীতি মানুষ কেন সমর্থন করবে? নয়াদিল্লি এবং ওয়াশিংটনের টু প্লাস টু দ্বিপাক্ষিক বৈঠকেও ভারত যে বার্তা দিতে চাইছে তা বাংলাদেশের জনগণ ভোট অধিকারের পক্ষে আছে কী- এমন প্রশ্ন উঠেছে। কিন্তু আমেরিকার মতের বিরুদ্ধে ভারত সরাসরি অবস্থান  না নিয়ে যে দ্বৈত নীতি বা কৌশল নিয়েছে তা জনগন পরিস্কার বুঝতে পারছে। তলে তলে সমঝোতা হয়ে গেছে মানে, ভারত মুখে আমেরিকার নীতির সাথে থাকবে আর তলে তলে আওয়ামী লীগকে সমর্থন দিয়ে যাবে- এটা এখন এই তফসিল ঘোষণার পরে পানির মতো পরিষ্কার। কিন্তু কোন সুপার পাওয়ার এই ভাবে ফাংশন করে না। এখানে কেউ আমেরিকান পন্থি রাজনীতির পক্ষে ওকালতির কথা বলছে না। বলছে, আমেরিকার সাথে যে পয়েন্টে জনগনের চাওয়ার ঐক্য তৈরি হয়েছে (গণতান্ত্রিক পথে, জনগনের ভোটে সরকার গঠন) তার বিরুদ্ধে ফ্যাসিবাদি প্রবণতা বাংলাদেশকে পরাশক্তির যুদ্ধভূমিতে পরিণত করবে। আর এর দায় যৌথ ভাবে ভারত ও আওয়ামী লীগের উপরেই বর্তাবে। ফলে ভারতকে এই তলে তলের চালাকি বাদ দিয়ে জনগনের অবস্থানের বা মনোভাবের দিকে ফিরতে হবে। এটা সবার জন্যই মঙ্গলজনক হবে।
বাংলাদেশ আরেকটি পাতানো নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত নয়। অংশ গ্রহণ মূলক নির্বাচন মানুষ সেলিব্রেট করতে চায়। মানুষ গণতন্ত্র চায়। ভোটের অধিকার চায়। তৈরি পোশাক, প্রবাসী আয় এবং জাতিসংঘে শান্তিরক্ষী পাঠানোর মতো বাংলাদেশের গর্বিত অর্জনগুলোকে প্রশ্নের মুখে ছুড়ে ফেলার আগে অনেকবার ভাবুন। এদেশের মানুষ ভোট দিয়ে সরকার গঠন করতে চায়। অন্য কিছু নয়। আগামীদিনে বাংলাদেশের মাটিকে পরাশক্তি গুলোর স্নায়ু যুদ্ধের কোনো রণক্ষেত্র বানাতে না চাইলে নির্বাচনে জনগণের ভোটের অধিকারের নিশ্চয়তা লাগবেই। এর কোন বিকল্প নাই।

সম্মৃদ্ধ জাতি গঠনের জন্য চাই উন্নত চিন্তা। গনতান্ত্রিক দেশ ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনে শুধু তথ্যযুদ্ধ এবং ইস্যু দিয়ে ইস্যু চাপা দেয়া নয়, দরকার মননশীল সাংবাদিকতা। একতরফা ভাবনা বা মতের প্রতিফলনের বাইরে সত্য ও প্রজ্ঞার সন্নিবেশ ঘটাতে বিশ্লেষণী সাংবাদিকতার কোন বিকল্প নেই। কিন্তু এই উদ্যোগ আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া সম্ভব নয়। ডোনেট করুন এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জাতিগঠনের গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অংশীদার হোন।

মোবাইল ব্যাংকিংঃ Bkash & Nagad (personal): 01677014094
Paypal https://paypal.me/jobanmedia

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

নাম *