Joban Magazineনীরব থাকার মাশুল 

নীরব থাকার মাশুল 

দেশব্যাপী বিদ্যুৎ ঘাটতি, ক্রমবর্ধমান মুদ্রাস্ফীতি এবং ডলারের রিজার্ভের তীব্র সঙ্কটের কারণে দেশে অর্থনৈতিক সঙ্কট নেমে আসার সাথে সাথে রাজনৈতিক সমস্যা আবারও আরও গভীর হচ্ছে। আমরা কি ১৫ বছর আগে এই জাতীয় অর্থনৈতিক সঙ্কটের পূর্বাভাস দিতে পেরেছিলাম, যে দেশ এইরকম একটি সঙ্কটের পথে যাচ্ছে? এই বিষয়ে বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞের জবাব হবে না সূচক, তা কিন্তু বেশ জোর দিয়েই বলা যায়। তাহলে আসলে কী ঘটেছে? যদিও এই বিষয়ে একটি তাত্ত্বিক এবং একাডেমিক আলোচনা হতেই পারে, কিন্তু এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হবে যদি আমরা এর কিছু মৌলিক প্রবণতা এবং সামাজিক দিকগুলো নিয়ে খোলামেলা কথা বলতে পারি।

গত ১৪টি বছর ধরে একটি প্রতিকূল অবস্থা চলছে, আমরা বাংলাদেশে এমন একটি সরকার প্রত্যক্ষ করেছি যার আচরণ ক্রমবর্ধমানভাবে দমনমূলক হয়ে উঠেছে। মূল বিরোধী দলকে কোণঠাসা করার উদ্যোগ নেয়ার মধ্য দিয়ে এই প্রবণতাটির শুরু হয়েছিল। আমরা দেখেছি হাজার হাজার বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কর্মী এবং নেতারা মিথ্যা অভিযোগ এবং সামান্য বা কল্পিত ঘটনার ভিত্তিতে দায়ের করা মামলায় কারাগারে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। দলের প্রধান খালেদা জিয়াও রেহাই পেলেন না। আমরা দেখলাম, আইন শৃঙ্খলা রক্ষার নামে মূলত বিরোধী দলকে রাজনীতি থেকে বিচ্ছিন্ন ও কোণঠাসা করে ফেলা, গুম, গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় তালা মারা, ভিন্নমতকে দমন করার জন্য কঠোর আইন প্রণয়ন করা এবং এ সবকিছুর মাধ্যমে বাক স্বাধীনতাকে বাধাগ্রস্থ করা প্রক্রিয়াসমূহ।

সরকার যখন নগ্নভাবে এবং ক্রমাগত বিচার ব্যবস্থাকে তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য কব্জা করে নিচ্ছিল, আমরা বিচ্ছিন্ন থেকে তখন বসে বসে তা দেখছিলাম। বেশিরভাগ স্বৈর-শাসনব্যবস্থা বিভিন্ন উপায়ে তাদের নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করে; কিন্তু নানানভাবে নাগরিকরাই শেষ পর্যন্ত জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতার দাবি জানান এবং জনগণের সোচ্চার ভূমিকাই সরকারের প্রকৃতি নির্ধারণ করে।
আমরা আজ যেসব অবক্ষয়গুলোকে জ্যান্তভাবে দেখছি তার পেছনের একটি প্রধান কারণ হলো, আমাদের সিলেকটিভ বিচার চাওয়ার প্রবণতা। কেউ এখানে যুক্তি দিয়ে বলতেই পারেন যে আমাদের সুশীল সমাজ বা সমোলোচকগণ এক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছে।

সরকার যখন নগ্নভাবে এবং ক্রমাগত বিচার ব্যবস্থাকে তার রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য কব্জা করে নিচ্ছিল, আমরা বিচ্ছিন্ন থেকে তখন বসে বসে তা দেখছিলাম। বেশিরভাগ স্বৈর-শাসনব্যবস্থা বিভিন্ন উপায়ে তাদের নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা করে; কিন্তু নানানভাবে নাগরিকরাই শেষ পর্যন্ত জবাবদিহিতা এবং স্বচ্ছতার দাবি জানান এবং জনগণের সোচ্চার ভূমিকাই সরকারের প্রকৃতি নির্ধারণ করে।

প্রথম আলোর প্রতিবেদক সামসুজ্জামান শামসের বহুল প্রচারিত ‘আটক/গ্রেফতার’-এর কথা আমাদের সবার মনে আছে। এটি বাংলাদেশে ক্ষমতায় থাকা শাসকদের দ্বারা সংঘটিত ভয়ের সংষ্কৃতি কায়েমের অসংখ্য উদাহরণের মাত্র একটি হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। প্রতিবেদককে গত ২৯শে মার্চ রাতে তার বাসা থেকে তুলে নিয়ে যায় সাদা পোশাকের লোকেরা। পরে অপরাধ তদন্ত বিভাগ গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করে। বলা হয়েছিল, তাকে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অধীনে আটক করা হয়েছে। যা বর্তমান স্বৈরতান্ত্রিক সরকারের একটি আদর্শ দমন কৌশল।
যদিও পরে তার জামিন নিশ্চিত হওয়াতে জনমনে স্বস্তি এসেছিল। তবে সবাই তো এত ভাগ্যবান না। যদিও বিতর্ক হতে পারে যে, এই ধরনের একটি প্রতিবেদকের প্রকাশিত সংবাদের কারণে গ্রেফতারি পরোয়ানা দেয়া যায় কি না? তবে তাকে আটকের গোটা প্রক্রিয়াই যে বেআইনি ছিল সে সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ নাই। যাই হোক, এই ধরনের ঘটনা ঘটতে পারার কারণ হলো, এর আগে বিরোধী দলের সদস্যদের বেআইনিভাবে আটক করা এবং বলপূর্বক গুমের ঘটনাগুলি সব সাধারণত প্রতিবাদহীন এবং প্রশ্নহীন ছিল। একটি সমাজে, নাগরিকদের আত্মতুষ্টি শুধুমাত্র ফ্যাসিবাদকে উৎসাহিত করবে এটাই স্বাভাবিক। যদি নাগরিক গোষ্ঠীগুলি কেবল ক্ষুদ্র স্বার্থ দ্বারা পরিচালিত হয় এবং সম্মিলিত স্বার্থের জন্য কোন উদ্বেগ না থাকে, তবে তা সরকারের স্বৈরতান্ত্রিক আচরণকে প্রভাবিত করতে সহযোগিতা করে।
ক্লেপটোক্রেসি/সুবিধাবাদিতা ফ্যাসিবাদের একটি সহজাত পরিণতি। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং মুক্ত বাজারের নীতিগুলি ভেঙে পড়েছে, এমন অবস্থায় ক্লিপটোক্রেসি বা সুবিধাবাদিতা, অসাধুতা একটি অর্থনৈতিক মন্দার দিকে আমাদের নিয়ে যাচ্ছে, আজ বাংলাদেশে এরকম পরিণতির দিকেই যাচ্ছে। তবে, আমরা এইরকম অবস্থায় বাঁচতে চাই কি না তা নির্ধারণ করা আমাদের নাগরিকদের উপরই নির্ভর করে।
আমরা তেমন শাসকই পাই যেমনটা আমরা চাই বা কামনা করি! আমরা অন্যান্য আরও অনেক বিষয় উল্লেখ করতে পারি, সমালোচনা করতে পারি কিন্তু আমাদেরকে প্রথমে নিজেদের দিকে গভীরভাবে নজর দেয়া দরকার।

ক্লেপটোক্রেসি/সুবিধাবাদিতা ফ্যাসিবাদের একটি সহজাত পরিণতি। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান এবং মুক্ত বাজারের নীতিগুলি ভেঙে পড়েছে, এমন অবস্থায় ক্লিপটোক্রেসি বা সুবিধাবাদিতা, অসাধুতা একটি অর্থনৈতিক মন্দার দিকে আমাদের নিয়ে যাচ্ছে, আজ বাংলাদেশে এরকম পরিণতির দিকেই যাচ্ছে। তবে, আমরা এইরকম অবস্থায় বাঁচতে চাই কি না তা নির্ধারণ করা আমাদের নাগরিকদের উপরই নির্ভর করে।

সর্বোপরি, এ দেশটি আমাদের সকলের। যদি আমরা কেবল আমাদের আপন আপন স্বার্থের সাথে যায় না এমন বিষয়গুলিতে চুপ থাকি তাহলে স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমাদের মুক্তি হবে না! তবে একটা কথা আমাদের সর্বদা মনে রাখতে হবে যে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে কার্যকর নীরবতার মূল্য সবসময়ই ক্ষতিকারক এবং আমাদের এর পরিণতির মুখোমুখি হতে প্রস্তুত হওয়া উচিত। আমরা যদি বর্তমান অর্থনৈতিক অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে এবং রাজনৈতিক অধিকারহীনতার প্রতিকার পেতে চাই, তবে সর্বপ্রথম আমাদের কণ্ঠ সচল রাখতে হবে। আমাদের জবান ফিরে পাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

“লেখাটি নিউ এজ থেকে নেয়া।
ইংরেজি থেকে অনুবাদ করেছেন, মুহাম্মদ ইশাত মান্নান তানিম

সম্মৃদ্ধ জাতি গঠনের জন্য চাই উন্নত চিন্তা। গনতান্ত্রিক দেশ ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনে শুধু তথ্যযুদ্ধ এবং ইস্যু দিয়ে ইস্যু চাপা দেয়া নয়, দরকার মননশীল সাংবাদিকতা। একতরফা ভাবনা বা মতের প্রতিফলনের বাইরে সত্য ও প্রজ্ঞার সন্নিবেশ ঘটাতে বিশ্লেষণী সাংবাদিকতার কোন বিকল্প নেই। কিন্তু এই উদ্যোগ আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া সম্ভব নয়। ডোনেট করুন এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জাতিগঠনের গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অংশীদার হোন।

মোবাইল ব্যাংকিংঃ Bkash & Nagad (personal): 01677014094
Paypal https://paypal.me/jobanmedia


ইস্রাফিল খসরু

ইস্রাফিল খসরু

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।

নাম *