অটোক্রেসি, ফ্যাসিজম নিয়ে নানান ক্রিটিক, দার্শনিক মতবাদ, ইতিহাসের বিস্তর বই পত্র আছে; কিন্তু অতি সাম্প্রতিককালের নন্দিত পক্ষান্তরে নিন্দিত স্বৈরাচার নিয়ে গবেষণা গ্রন্থ উল্লেখ করার মত খুব বেশি একটা নাই। যা চোখে আঙ্গুল দিয়ে স্বৈরচারের র ইমেজ পাঠকের সমানে দৃশ্যমান করবে।
গত ২০২০ সালে ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস থেকে প্রকাশিত হয় আলোচিত বই “দ্য আর্ট অব পলিটিক্যাল কন্ট্রোল ইন চায়না”। ওই বছরই অর্থাৎ ২০২০ সালেই আমেরিকান পলিটিক্যাল সাইন্স এসোসিয়েশনের ডেমোক্রেসি এন্ড অটোক্রেসি বিভাগ থেকে পুরস্কৃতও হয় বইটি। ইন্ডিয়ায় এই বই নিয়ে বিভিন্ন মেইনস্ট্রিম মিডিয়ায় বেশ কিছু রিভিউও হয়েছে। অন্যদিকে আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক মহল নির্বিকার! লেখক ড্যানিয়েল সি. ম্যাটিংলি চীনে বসেই (হুনান প্রভিন্স) চীনা স্বৈরাচারের স্বরূপ গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেন, আর সেই গবেষণা গ্রন্থই হচ্ছে “দ্য আর্ট অব পলিটিকাল কন্ট্রোল ইন চায়না” বা রাজনীতিকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার চায়না কৌশল। ড্যানিয়েল সি. ম্যাটিংলি ইয়েল ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তরুণ সহকারী অধ্যাপক। আন্তর্জাতিক রাজনীতি, ইতিহাস, ঐতিহাসিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা মূলত তার আগ্রহের বিষয়। এই গ্রন্থে তিনি বিভিন্ন তথ্য, উপাত্ত ও নানান প্রমাণাদি যথাযথ সন্নিবেশ করে প্রমাণ করেছেন, কিভাবে চায়না একটি পুরোদস্তর স্বৈরাচারী একনায়ক দেশ হিসেবে টিকে থাকছে। তিনি দেখিয়েছেন, চীন সরকার গণতন্ত্রহীনতা, মানবাধিকার লঙ্ঘনের দগদগে ঘাঁ-কে উন্নয়নের ব্যান্ডেজ দিয়ে ঢেকে ফেলে কিভাবে বিশ্বের সামনে নিজের অবস্থানকে প্রকাশ করে যাচ্ছে। আর এর প্রভাবে আরও কিছু দেশ গণতন্ত্রহীন অমানবিক উন্নয়ণের জিকির তুলে জনগণের সর্বনাশ করছে। বাংলাদেশও এই ক্ষেত্রে চায়নিজ মডেল ফলো করছে বলা যায়।
যদিও ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও স্বৈরাচারী সরকার – বিষয়টি আলোচনার জন্য নতুন কোন কিছু নয় তবে এর আঙ্গিক, স্বরূপ, উপাদান, অনুষঙ্গ – সময় ও স্থান ভেদে যুগের সাথে সাথে যে নতুনত্ব যোগ করে সেটাই মূলত এই বইয়ের প্রতিপাদ্য। আর টাটকা উদাহরণ হিসেবে হাজির করা হয়েছে চায়নার সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করার কৌশলসমূহ। সোজা কথায় বলা যায়, চীন সরকার কিভাবে নিজ দেশের জনগণকে নিয়ন্ত্রন করে রাখে এবং সরকারকে সমর্থন করতে বাধ্য করে সেটাই এই বইয়ের আলোচ্য বিষয়বস্তু। যা বর্তমান বাংলাদেশের সমাজকে নিয়ন্ত্রণের আওয়ামী কৌশলের সাথে বেশ খাপে খাপে মিলে যায়। তাই এই বই এখন পাঠ করা আমাদের জন্য বেশ কাজের হতে পারে।
দিবালোকের মত পরিষ্কার বিশ্বব্যাপী যেসব দেশকে চীন তার উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে কাছে টেনে নিয়েছে বা রন্ধ্রে ঢুকেছে সেসব দেশে তাদের (চীনের) আভ্যন্তরীন রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করার কৌশলগুলোও অর্থনৈতিক সহযোগিতার পাশাপাশি রপ্তানি করেছে। তবে এটা খুবই স্বাভাবিক – সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক লেনদেনের বাইপ্রোডাক্ট হিসেবে তুলনামূলক শক্তিশালী দেশের রাজনৈতিক মতাদর্শও ঋণগ্রহীতা দেশে ঢুকে পরে। একইভাবে চীনের অর্থনৈতিক অংশীদার দেশগুলোর সরকারসমূহ বিশেষকরে দক্ষিণ এশিয়ার মায়ানমারে গণতন্ত্র এখন পুরোপুরি মৃত আর পাকিস্তানে গণতন্ত্র মৃত্যুপথযাত্রী; ভঙ্গুর অর্থনীতির অবস্থা তো বলাইবাহুল্য। অন্যদিকে শ্রীলংকার সরকারকে লুটপাটের উন্নয়নের সুযোগ দিয়ে দেশটাকে দেউলিয়াত্বের পথে নিয়ে এসেছে। শ্রীলংকার রাজনীতি ও সরকার হয়ে গিয়েছিল দ্য ফ্যামিলি এন্ড কোম্পানি ধরনের। মায়ানমার হচ্ছে চীনের কার্বন কপি, শুধু অনুন্নত – এটুকুই ভিন্ন। শুধু অর্থনীতিকে একপাশে রেখে বাকি সব যেন আয়নায় দেখা প্রতিবিম্ব। আলোচ্য বইয়ে চীনের উইঘুরে মুসলমানদের দমনের বিষয়টিও টেনে এনেছেন ম্যাটিংলি। আমরা মিলিয়ে দেখতে পারি, চীন যেভাবে জিনজিয়াং তথা পূর্ব তুকিস্তানের প্রায় ১৫ লক্ষ উইঘুর মুসলিমদের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে দশকের পর দশক ধরে বন্দী রেখে হীরক রাজার দেশের মত ব্রেইন ওয়াশের চেষ্টা চালাচ্ছে, তারই প্রতিবিম্ব মায়ানমারে রোহিঙ্গা গণহত্যা ও দেশত্যাগে বাধ্য করা। এর সবই ঘটছে চীনের সমর্থনে। এমনকি মায়ানমারের কাছে যেসব মুসলিম দেশ মারণাস্ত্র বিক্রি করছে তারা সকলেই চীনের অর্থনৈতিক অংশীদার।
এখনকার ফ্যাসিবাদের কৌশল হলো, সে নিজেকে ফ্যাসিস্ট বলবে না। মুখে গণতন্ত্রের কথা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলবে। প্রচুর মিডিয়া থাকবে, বুদ্ধিজীবি থাকবে, সিভিল সমাজ থাকবে, পার্লামেন্ট থাকবে, নির্বাচনও থাকবে, প্রতিষ্ঠান থাকবে; কিন্তু এগুলার কোন মেরুদণন্ড থাকা যাবে না, সব থাকবে, থাকবে না শুধু স্বাধীনতা। সব হবে পার্টিজান। রাষ্ট্র আর পার্টির মধ্যে ভেদরেখা মুছে ফেলেই সমাজে একচ্ছত্র রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার এই কৌশলই গণতান্ত্রিক মোড়কে ফ্যাসিস্ট শাসনের কৌশল। আর চায়না বর্তমান দুনিয়া এই মডেলের গুরু। তাদের পার্টনারগুলো গুরুকে অনুসরণ করেই সমাজে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে সফল হচ্ছে।
ম্যাটিংলির ভাষ্যমতে, স্বৈরতন্ত্রকে টিকে থাকতে হলে সাধারণত রাষ্ট্রযন্ত্রের মূখ্যপদগুলোকে পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে নিতেই হয়। যা তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন চীনে। সেখানে প্রায় চারটি রাজ্য ও ১৪ টি গ্রামের উপর করা সার্ভের ভিত্তিতে তিনি প্রমাণ করেছেন কিভাবে কম্যুনিস্ট পার্টি প্রান্তিক গ্রামের সমাজকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়াকে সহীহ করতে বিশেষ মতবাদকে এমনভাবে এস্টাবলিশ করা হয়, যেন এটার বিপক্ষে যাওয়া ভয়াবহ দেশদ্রোহিতা। এইসব দেশদ্রোহীদের অনাগত ভবিষ্যত সন্তানেরাও জন্মাবে দেশদ্রোহী হয়ে! উল্টোভাবে যদি কেউ চিহ্নিত দেশদ্রোহী হয়েও সেই মতবাদের মুরিদ হয় তাহলে সে বিচারের ঊর্ধ্বে। অর্থাৎ কম্যুনিস্ট পার্টির সদস্যদের জন্য সব জায়েজ। বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ হলে এখন যেমন সব জায়েজ আরকি!
ফলে ব্যক্তিগতভাবে, একদম প্রাইভেট জোনে কোন একজন ভিন্নমতের অনুরাগী হলেও সরকারের বিশেষ মতবাদকে পবিত্র জ্ঞান করেই জনসমাজে নিজের মত প্রকাশ করতে হবে। উচ্চতর পদের চাকুরী তথা জৈবিক সুবিধা ভোগ করতে গেলে ঐ বিশেষ মতবাদের স্টেরিওটাইপের ভেতর দিয়ে যেতেই হবে। এতে রাষ্ট্রযন্ত্রের মূখ্য পদে সরকারবিরোধী কোন ব্যক্তি যদি ঢুকেও পরেন সেখানে তাকে মরা সাপের মত সোজা হয়ে থাকতে হয়; কারণ এখানে তার ক্যারিয়ার তথা জীবনের চাহিদাকে বা বেঁচে থাকার প্রয়োজনীয়তার কথা চিন্তা করতে হয়। এখানে রাষ্ট্র স্বার্থের বিরুদ্ধে যাতে কেউ অবস্থান নিতে তা পারে তা সফলভাবে সংরক্ষণ করতে পেরেছে। এখানে পার্টিই রাষ্ট্র। স্বৈরতন্ত্রকে বেগবান এবং বিশুদ্ধতায় পরিপুষ্ট করতে সমাজে এমন ধরনের “সিভিল সোসাইটি” তৈরি করা হয়েছে যাতে তারা সরকারের ছায়া হিসেবে কাজ করে। যেমন: সুশীল সমাজ, শিল্পী সমাজ, সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবি সমাজ, খেলাধুলার আইকনিক প্লেয়ার, ধর্মবিদ, মসজিদের উন্নয়ন, সামাজিক ক্লাব বা ইউনিয়ন – সব রাষ্ট্র প্রচারিত মতাদর্শের আলোকে ফাংশন করে। কারো কোন ভিন্নমতের সুযোগ নাই।
যে কথা স্বৈরাচার স্বকণ্ঠে বলতে পারে না সেই কথা এ সকল ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান থেকে বারবার বলে জনমত গড়া হয় এবং স্বৈরাচারী সরকারের নিরাপত্তা বজায় রাখা হয়। উন্নয়ন, আধুনিকতা নানান নামের স্টেরিওটাইপ কথার ফুলঝুড়ি ছুটতেই থাকে এদের বয়ানে। এমন ধরনের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হয় যারা বিনোদনের ভেতর দিয়ে সরকারকে গেøারিফাই করবে কিন্তু নাগরিকের আকাক্সক্ষার তোয়াক্কা করবে না। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণে ম্যাটিংলি পুতিনের অর্থোডক্স চার্চ নিয়ন্ত্রণের ইস্যুটি তুলে ধরেছেন। চার্চের সাথে রাষ্ট্র প্রধানের সম্পর্ককে তিনি পক্ষান্তরে চার্চের উপর রাষ্ট্রের চাপিয়ে দেয়া নীতিমালা আর্চবিশপের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে পবিত্রভাবে ছড়িয়ে দেয়াকেই বুঝিয়েছেন। যা তিনি চার্চকে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে রাখার পদ্ধতি হিসেবে তুলে ধরেছেন।
হাঙ্গেরির ভিক্টর অরবান পুরো দেশে ১৬ হাজার কমিটি করেছিলেন, যাদের কাজ ছিল কনসার্টের মাধ্যমে অরবানকে প্রমোট করা এবং তার একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ কায়েমের পক্ষে মতামত তৈরি করা। ভেনেজুয়েলায় হুগো শ্যাভেজের পরে মাদুরোই চার্চের ফাদারদের দিয়ে কমিটি করে ধর্মীয় আবহে নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি বেছে নিয়েছেন।
মি. ম্যাটিংলি চীনের কন্ট্রোল তথা কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিকে মোটাদাগে তিনভাগে ভাগ করেছেন।
১. কর্মী তৈরির প্রক্রিয়া (Cultivating civil society)
২. কর্মী সংযোজন, সংযুক্তি বা নিয়োগ (Co-optation)
৩. ইনফিল্টারেশন বা এনকারেজ টু ইনভলভ (Infiltration)
এই সব প্রক্রিয়া ব্যাকরণগতভাবে ফলো করা হয়। তবে চীনা কম্যুনিস্ট সরকারের এজেন্ডা বাস্তবায়নের প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে গুপ্ত বা সিক্রেট পুলিশ ও মিলিটারি। ভয়ের সংস্কৃতি সকল ধরনের স্বৈরাচারের টিকে থাকার মূল হাতিয়ার। ভিন্নমত পোষণ করলেই সিক্রেট পুলিশ তাকে ধরে নিয়ে গুম বা কোন ইন্টারোগেশন সেলে নিয়ে যাবে। কেউ জানতেই পারবে না ভিকটিমের হদিস। কারণ গুপ্ত গ্রেফতারের তথ্য স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয়তো দেয়া হয় না। অথবা বিশেষ গোপনীয়তায় সমন্বয় করা হয়। তাদের এই পদ্ধতিটা ইতিমধ্যে বেশ কিছু দেশের সরকারের কাছে জনপ্রিয় হয়েছে। বাংলাদেশে তো আমরা এটা গত দেড় দশক ধরে দেখছি। আর মিলিটারি ব্যবহারের ক্ষেত্রে ম্যাটিংলি মিশরের তাহরীর স্কয়ারের তথ্য তুলে ধরেছেন। কিভাবে তৎকালীন স্বৈরাচারী সরকার জনসাধারণের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচীতে ট্যাংক ও তাজা গুলির ব্যবহার করে স্বৈরাচারী এজেন্ডা বাস্তায়ন করেছে, তা দেখিয়েছেন।
কর্মী তৈরির প্রক্রিয়ায় বাক-স্বাধীনতা, গণতান্ত্রিক মন-মানসিকতা প্রযোজ্য নয়। স্বৈরাচারের পারপাস সার্ভ করার মানসিকতা তৈয়ার হওয়াটাই মূল লক্ষ্য আর এটাই যোগ্যতা। চীনের গ্রাম থেকে শুরু করে এলিট সোসাইটি সবখানেই কম্যুনিস্ট পার্টির নিয়ন্ত্রণে নিয়োগ প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে নানান সিভিল সোসাইটি তৈরি করা হয়। যাদের তুলনামূলক নিরপেক্ষ বা স্ব স্ব-সমাজের প্রতি দায় থাকার সুযোগ নেই। কম্যুনিস্ট পার্টির সরকারের পরিপূর্ণ নির্দেশনা ও নিয়ন্ত্রনেই তাদের চলতে হবে। বাধ্যতামূলক এক সন্তান গ্রহণ থেকে ব্যক্তিভেদে জমি বরাদ্দ প্রক্রিয়া সবই রাষ্ট্র সুবিধামত প্রয়োগ করে যা ব্যক্তি বা পরিবারের চাহিদার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হওয়া না হওয়া গুরুত্বপূর্ণ নয়। আর যা কিছু অসংগতিপূর্ণ সেগুলোকে স্বাভাবিক বা বৃহত্তর কল্যাণের পক্ষের বিষয় হিসেবে প্রচার ও প্রতিষ্ঠার জন্য রয়েছে অনুগত সিভিল সোসাইটি। বাংলাদেশের ফ্যাসিবাদকে স্বাভাবিক করতে যেমন রয়েছে শাহবাগী বুদ্ধিজিবী সমাজ, শিল্পী, লেখক, মিডিয়া ইত্যাদি।
ম্যাটিংলির এই গবেষণা গ্রন্থটিতে তিনি যে থিউরি দিয়েছেন এবং এর পক্ষে দেয়া তথ্য, উপাত্ত দিয়ে বৈশ্বিক স্বৈরাচারের চেহারা চেনা যাবে। তিনি প্রমাণ করেছেন স্বৈরাচারের সহযোগীরা রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা ও সম্মান দ্বারা কিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং সমাজের উপর প্রভাব বিস্তার করে স্বৈরাচারের হাতকে আরো বেশি গতিশীল ও শক্তিশালী করে। স্বৈরাচার শক্তি অর্জন করে মূলত প্রান্তিক গ্রামের একটা পার্টি সমর্থিত সমিতি বা ইউনিয়ন থেকে। সেখান থেকে শুরু করে রাষ্ট্রের সেন্ট্রাল পর্যন্ত সবই থাকে পরিপূর্ণ নিয়ন্ত্রণে। পেশাজীবি সংগঠন যেগুলোর অন্তত নিরপেক্ষ থাকা প্রয়োজন নাগরিক স্বার্থে, সেখানেও পার্টি পলিসিকে ধারণ করে এসোসিয়েশন তৈরি করা হয় ক্ষমতার নিরাপত্তা ও স্থায়ীত্ব টিকিয়ে রাখতে। যারা মূলত পার্টির একেকটা সাউন্ড বক্স।
এককথায়, এখনকার ফ্যাসিবাদের কৌশল হলো, সে নিজেকে ফ্যাসিস্ট বলবে না। মুখে গণতন্ত্রের কথা, মতপ্রকাশের স্বাধীনতার কথা বলবে। প্রচুর মিডিয়া থাকবে, বুদ্ধিজীবি থাকবে, সিভিল সমাজ থাকবে, পার্লামেন্ট থাকবে, নির্বাচনও থাকবে, প্রতিষ্ঠান থাকবে; কিন্তু এগুলার কোন মেরুদণন্ড থাকা যাবে না, সব থাকবে, থাকবে না শুধু স্বাধীনতা। সব হবে পার্টিজান। রাষ্ট্র আর পার্টির মধ্যে ভেদরেখা মুছে ফেলেই সমাজে একচ্ছত্র রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার এই কৌশলই গণতান্ত্রিক মোড়কে ফ্যাসিস্ট শাসনের কৌশল। আর চায়না বর্তমান দুনিয়া এই মডেলের গুরু। তাদের পার্টনারগুলো গুরুকে অনুসরণ করেই সমাজে রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ কায়েম করতে সফল হচ্ছে।
তবে নাগরিকদের আশার জায়গা হলো, সময়ের ব্যবধানে স্বৈরতন্ত্রের পতন বাধ্যতামূলক। যতটা দীর্ঘসূত্রিতা নাগরিকের উপর চেপে থাকবে ততটা কষ্ট সইতে হবে ঠিকই, তবে যখন পতনের শুরু হবে তখন এই সমস্ত মেকানিজম ব্যাকফায়ার করে। তবে এই জন্য আগে তাদের কৌশলগুলো বুঝতে হবে। দেখা যাচ্ছে গণতান্ত্রিক সমাজের মডেলটা তারা বিকৃত করেই ফ্যাসিবাদ টিকিয়ে রাখছে। প্রতিষ্ঠান থাকবে, সিভিল সমাজ থাকবে, প্রতিবাদও থাকবে কিন্তু সব কিছু পার্টি নিয়ন্ত্রণে হতে হবে। এটাই গণতান্ত্রিক যুগে ফ্যাসিবাদ টিকে থাকার চায়না মডেল।
সম্মৃদ্ধ জাতি গঠনের জন্য চাই উন্নত চিন্তা। গনতান্ত্রিক দেশ ও সমৃদ্ধ জাতি গঠনে শুধু তথ্যযুদ্ধ এবং ইস্যু দিয়ে ইস্যু চাপা দেয়া নয়, দরকার মননশীল সাংবাদিকতা। একতরফা ভাবনা বা মতের প্রতিফলনের বাইরে সত্য ও প্রজ্ঞার সন্নিবেশ ঘটাতে বিশ্লেষণী সাংবাদিকতার কোন বিকল্প নেই। কিন্তু এই উদ্যোগ আপনাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া সম্ভব নয়। ডোনেট করুন এবং বুদ্ধিবৃত্তিক জাতিগঠনের গণতান্ত্রিক সংগ্রামে অংশীদার হোন।
মোবাইল ব্যাংকিংঃ Bkash & Nagad (personal): 01677014094
https://paypal.me/jobanmedia